কুয়া দেখতে কুয়াকাটায় – ভ্রমণের স্মৃতিকথা (পর্ব-৩)

ইকোনমিক্স ডিপার্টমেন্ট থেকে কুয়াকাটা ভ্রমণে যাবে। সিএসই ডিপার্টমেন্টের ছাত্র হলেও ইকোনমিক্সে বন্ধু, বড় ভাই, ছোট ভাইয়ের সংখ্যা নেহায়েত কম না। তাই আগের বছর কুয়াকাটা ঘুরে আসলেও ঠিক হলো আবার যাবো। তাছাড়া জানেন-ই তো ঘুরতে যেতে আমার কখনো না থাকে না।

একটা তথ্য জানিয়ে রাখি ২০১৫ সালে কুয়াকাটাতে গিয়েই জীবনে প্রথম মারাত্মক মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার শিকার হই। সে গল্প অন্য আরেকদিন করবো…

২৩ মার্চ রাতে পটুয়াখালীগামী কুয়াকাটা-১ লঞ্চে চড়ে বসি। আমরা প্রায় ৭০-৮০ জনের বিশাল এক দল ছিলাম। সবাই সময়মত চলে আসলেও রনি ভাইয়ের কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিলো না। ফোনের পর ফোন দিয়ে একসময় জানা গেলো ভাই গুলিস্তানে জ্যামে আটকা পড়ে আছেন। এদিকে লঞ্চ ছাড়ি ছাড়ি করছে। উপায় না দেখে কয়েকজন গিয়ে লঞ্চ কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে আরো কিছু সময় অপেক্ষা করার অনুরোধ জানালো। প্রায় ৪০ মিনিট পর রনি ভাইয়ের আগমন ঘটলো। আমরা সবাই হই হুল্লোড় করে উঠলাম…

সেদিন সম্ভবত পূর্ণিমা ছিলো। জোছনা দেখতে সবাই লঞ্চের ছাদে চলে গেলাম। বুড়িগঙ্গা থেকে জোছনা দেখে মজা নেই, জোছনার আসল রুপ দেখা যায় মেঘনায়। যেখানে দুই পাড় দেখা যায় না, কোন কৃত্রিম আলো নেই। উপরে জোছনা আর নিচে অবারিত জলরাশি…

জোছনাবিলাশ করে আমরা লঞ্চের উপরতলার সামনের ডেকে থিতু হলাম। শুরু হলো গানের আসর। রাতের খাবারের জন্য ডাক পড়লে খেয়েদেয়ে আবারও সেই একই জায়গায়। এবার অবশ্য গান না আড্ডা শুরু হলো।

যত রাত বাড়তে থাকলো তত মানুষ কমতে শুরু করলো। তিনটার দিকে আমিও আড্ডা ছেড়ে কেবিনে চলে গেলাম কিছু সময় বিশ্রাম নেওয়ার জন্য। সকালে উঠে শুনি কয়েকজন ডেকে শুয়ে ছিলো। ঘুম এত গাঢ়ো ছিলো যে কুয়াশায় ভিজে একাকার হয়েছে টেরও পাই নাই।

সকালে পটুয়াখালী নেমে সবাই নাস্তা করে নিলাম। বাকিপথ বাসে করে যেতে হবে। আনুমানিক ১০-১১ টার দিকে আমরা কুয়াকাটা পৌঁছালাম। আমরা উঠেছি পর্যটন মোটেলে। ৪ জনের গ্রুপ করে সবাইকে রুমের চাবি দিয়ে দেওয়া হলো।

আমার লেখা ই-বুক কিনতে এখানে ক্লিক করুন

দুপুরের খাবার খেয়ে কিছুটা বিশ্রাম নিয়ে বিকালে সমুদ্র সৈকতে ঘুরতে গেলাম। প্রচুর ছবি তোলা হলো। বাইক নিয়ে চলে লেবুর চর গেলাম সূর্যাস্ত দেখতে। সন্ধ্যাটা সৈকতে ঘুরাঘুরি করেই কাটালাম…

পরদিন সূর্যোদয় দেখতে গঙ্গামতির চরে যাওয়ার কথা থাকলেও ঘুম থেকে উঠতে পারি নাই। অবশ্য না গিয়ে ভালোই হয়েছে যারা গেছে তারাও নাকি দেখতে পায় নাই।

আজ ভ্রমণের দ্বিতীয় দিন। আজ আমরা ফাতরার চরে যাবো ট্রলারে করে। প্রচন্ড গরম থাকায় কেউ মাথায় ক্যাপ দিলো, কেউ গামছা, কেউবা ছাতা। রোদের কারনে ট্রলার জার্নি তেমন উপভোগ্য না হলেও বঙ্গোপসাগর ও আন্ধারমানিক নদীর মোহনায় ট্রলার যখন অস্বাভাবিকভাবে দুলতে শুরু করলো তখন কিছুটা এডভেঞ্চারের স্বাদ পাওয়া গেলো।

ফাতরার চর সুন্দরবনের শ্বাসমূলীয় বনাঞ্চলের একটি অংশ। এখানে কোন হিংস্র বন্যপ্রাণী নেই। সুন্দরবনের মত এখানেও দিনে দুইবার জোয়ার ভাটায় বন ডুবে যায়। ফাতরার বনের সবুজ অরণ্যের মাঝ দিয়ে হেঁটে গেলে ছোট একটা সমুদ্র সৈকত পাওয়া যায়। সেখানে দীর্ঘসময় ছবি তুলে আবার মোটেলে চলে আসলাম।

বিকেলে কুয়াকাটার কুয়া, ১৭-১৮ শতকের প্রাচীন জাহাজের ধ্বাংসাবশেষ ঘুরে ঘুরে দেখলাম। আজ রাতের খাবারে গ্র্যান্ড পার্টি ছিলো। রাতের খাবারের পর আবার সমুদ্র সৈকতে চলে গেলাম। সমুদ্র পাড়ে এসে সমুদ্রের সাথে সময় না কাটেলে হয়…

আজ ভ্রমণের তৃতীয় দিন। আজ আমরা ঢাকা চলে যাবো। প্রথমে কথা ছিলো পটুয়াখালী থেকে লঞ্চে করে ঢাকা যাওয়ার। কিন্তু কতিপয় ব্যক্তির স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে পরবর্তীতে ঠিক হলো বাসে করে বরিশাল গিয়ে দুপুরে গ্রীন লাইন ওয়াটার বাসে করে রাতের মধ্যে ঢাকা চলে যাবো।

সকালের নাস্তা করে তাই ব্যাগ গুছিয়ে বের হয়ে পড়তে হলো। কুয়াকাটা-বরিশালের বাস জার্নি মোটেই সুখকর হলো না। অনেক গরম ছিলো। স্বাভাবিকভাবেই সবাই ক্লান্ত ছিলো। গ্রীন লাইনে উঠে বেশিরভাগই চেয়ারে ঘুমিয়ে পড়লো। গ্রীন লাইনে সেবারই প্রথম উঠেছিলাম কিন্তু এতটাই ক্লান্ত ছিলাম যে ঘুরে ঘুরে দেখার মত শক্তিও ছিলো না।

রাত ১১টায় ঢাকা পৌঁছে সমাপ্তি ঘটে কুয়াকাটা ভ্রমণের…

ভ্রমণকালঃ ২৩-২৬ মার্চ, ২০১৬

শেয়ার করে বন্ধুদের জানিয়ে দিন

Similar Posts